Saturday 22 July 2017

বাইকে ৩ হাজার কিলোমিটার, খরদুংলা জয়


কম্পিউটার প্রকৌশল নিয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) পড়াশোনা করেন আশরাফুল আলম পড়াশোনা শেষে চাকরি নেন রিভ সিস্টেমসে কর্মক্ষেত্রে বসে প্রোগ্রামিংয়ের জটিল সব সমস্যার সমাধান করতেন কাজের বাইরে মাঝেমধ্যে বাবার কিনে দেওয়া ১০০ সিসি বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়তেন চলে যেতেন শ্রীমঙ্গল বা নরসিংদীতে এভাবেই তাঁর মধ্যে বাইক নিয়ে রোড ট্রিপের শখ তৈরি হয় গাড়ি চালানো যায়পৃথিবীর এমন উচ্চতম রাস্তাগুলোর মধ্যে একটি ভারতের খরদুংলা পাস এই পাস বাইক নিয়ে পার হওয়ার শখ চাপে আশরাফুলের মনে শখ পূরণে শুরু হয় প্রস্তুতি


বাইকের চাকা পাংচার হয়ে গিয়েছিল, তাই পথে অপেক্ষা, যদি কোনো সাহায্য পাওয়া যায়


দেড় বছর ধরে প্রস্তুতি চলে প্রস্তুতির অংশ হিসেবে আশরাফুল বাইক নিয়ে ঢাকা থেকে সাজেক ভ্যালি যান বাংলাদেশে বাইকারদের জন্য অন্যতম বিপজ্জনক এই রাস্তায় বাইক চালিয়ে নিজেকে ঝালিয়ে নেন আশরাফুল নয় দিনের ট্রেক করেন অন্নপূর্ণা বেসক্যাম্প পর্যন্ত পাহাড়ি রাস্তায় বাইক চালানোর অভিজ্ঞতা নেওয়ার জন্য ভুটানের থিম্পু থেকে পারো পর্যন্ত বাইক চালান লেহ-মানালি হাইওয়েতে বাইক ট্রিপবিষয়ক সব ব্লগ পড়া শুরু করেন পেট্রলপাম্প কোথায়, রাস্তায় চাকা ফেটে গেলে কী করতে হবে, কোথায় থাকতে হবে, কীভাবে অধিক উচ্চতায় শরীরকে মানিয়ে নিতে হবেযাবতীয় খুঁটিনাটির তথ্য সংগ্রহ করেন
 কাশ্মীরের সোনামার্গে ঈদের নামাজ পড়ার পর


প্রস্তুতি শেষে আসল অভিযানে নামেন আশরাফুল তাঁর সফরসঙ্গী আদিল নওশাদ তিনিও বুয়েটে পড়েছেন এখন দুজনই একই অফিসে চাকরি করেন আশরাফুলের নেতৃত্বে দুজনের সফল অভিযানের বিবরণ প্রথম আলোকে জানান রিভ সিস্টেমসের মার্কেটিং ম্যানেজার ইবনুল করীমআশরাফুল আদিল দিল্লি থেকে ভাড়া করেন রয়েল এনফিল্ড বুলেট ৫০০ সিসি বাইক দিল্লি থেকে পাঞ্জাব হয়ে শ্রীনগর সেখান থেকে লেহ হয়ে মানালি মানালি থেকে আবার দিল্লি এই ছিল ট্রিপের রুট ১১ দিনে তাঁরা পাড়ি দেন তিন হাজার কিলোমিটার পথ প্রতিদিন বাইক চালিয়েছেন ১০ ঘণ্টার মতো


খরদুংলাতে দ্বিতীয় দিন ওঠার সময় প্রচণ্ড তুষারধসের কারণে রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়

অধিক উচ্চতায়অলটিচিউড সিকনেসদেখা দেয় বাতাসে অক্সিজেন কমে যায় পানিস্বল্পতা ক্লান্তি নিয়ে আসে তার ওপর পাহাড়ি আঁকাবাঁকা ভাঙা সড়কপথে প্রতিমুহূর্তে বিপদের আনাগোনা তো ছিলইগত ২৮ জুন লেহ থেকে খরদুংলা পাস পার হয়ে আশরাফুলরা নুবরা ভ্যালি পৌঁছান কোনো রকম বিপদ ছাড়াই আবহাওয়া খারাপ থাকায় পরবর্তী গন্তব্য প্যাং অং যাওয়ার রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয় কারণে উল্টো পথে খরদুংলা পাস হয়ে লেহ যেতে হয় তাঁরা পরপর দুদিন দুবার খরদুংলা পাস পার হন


ওপর থেকে দেখা লেহ শহর

দ্বিতীয়বার খরদুংলা পার হওয়ার পর আবহাওয়া খারাপ হতে থাকে রাস্তার ওপর জমে যায় এক ফুট বরফ ভূমি ধসে রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় পড়ে থাকে পাথর তুষারপাত আর ঠান্ডা বাতাসের মধ্যে ঋণাত্মক ছয় ডিগ্রি তাপমাত্রায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয় নয় ঘণ্টা সঙ্গে থাকা পানি শেষ হয়ে যায় ঠান্ডায় পায়ে খিল ধরে বারবার ব্রেক আর ক্লাচ টানতে গিয়ে হাতের আঙুলের অবস্থাও খারাপ হয়ে যায় অনেক কষ্টে ভয়ংকর রাস্তা পার হয়ে অবশেষে তাঁরা মানালি পৌঁছান
 খরদুংলাতে ফলকের সামনে ছবি তোলার জন্য বাইকারদের ভিড়


আশরাফুল-আদিল ১১ দিনে পার হন সাতটি উঁচু পাস এগুলো হলো খরদুংলা (১৮ হাজার ৩৮০ ফুট), তাগলাং লা (১৭ হাজার ৫৮২ ফুট), বরলাচা লা (১৬ হাজার ৪৩ ফুট), ফতু লা (১৩ হাজার ৪৭৯ ফুট), নমিকা লা (১২ হাজার ১৯৮ ফুট), জজি লা (১১ হাজার ৫৭৫ ফুট) রোটাং পাস (১৩ হাজার ৫৮ ফুট)


জম্মু কাশ্মীরে ঢোকার পূর্বে


কেন এমন দুঃসাহসী কাজে উৎসাহী হলেনজানতে চাইলে আশরাফুল বলেন, সৌন্দর্য উপভোগ করতে শীততাপনিয়ন্ত্রিত গাড়িতে করে কোনো জায়গায় যাওয়া যায় কিন্তু তাতে অনুভবের বিষয়টি অপূর্ণ থাকে জন্য বাইকে রোড ট্রিপের বিকল্প নেই যখন বাংলাদেশি বলে কাশ্মীরের লোকজন এসে জড়িয়ে ধরেছিল, তখন লাদাখ আর মানালির পাহাড়গুলোর বিশালতার কাছে নিজেকে তুচ্ছ মনে হয়েছিল রাস্তার সমস্ত ক্লান্তি দূর হয়ে গিয়েছিল এমনটা হলে নতুন উদ্যমে ক্লাচ ছেড়ে এক্সেলেরেটর বাড়িয়ে নেমে পড়া যায় রাস্তায় অবশ্য আশরাফুল-আদিলের আগেও বাংলাদেশি তরুণেরা খরদুংলা পাস জয় করেছেন ভবিষ্যতে যাঁরা এই পাস জয় করতে চান, তাঁদের সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেওয়ার পরামর্শ এই দুজনের আর বাইক চালানোর সময় সাবধান তো থাকতেই হবেবাংলাদেশের সড়কগুলো বাইকারদের জন্য নিরাপদ হোকএমনটাই চান আশরাফুল সড়ক নিরাপদ হলে আরও অনেক তরুণ বাইক নিয়ে রোড ট্রিপে আগ্রহী হবেন বলে তাঁর ধারণা


No comments:

Post a Comment

Happy Friendship Day

Happy Friendship Day. Wish you all of my friends in the World. Facebook