বনে
যেতে হবে নৌকায় করে। ছোট
নৌকায় প্রমত্ত আন্ধারমানিক-খাপড়াভাঙা পাড়ি দিতে হবে—ভাবতেই কাঁপন ধরে যায়। তবে
বনের রূপের টানে না যাওয়াটাও সায় দেয়নি আমাকে। আমরা
সাতজন প্রমত্ত নদ-নদী পাড়ি দিয়ে ঢুকলাম ফাতরার বনে। বনের
যতই কাছে যাই, অবাক হওয়ার মাত্রা ততটাই বাড়তে থাকে। সুন্দরী,
গরান, বাইন, গোলপাতা, পশুর, গেওয়া, করমচা—কী নেই? সুন্দরবনের সব গাছ ডালপালা মেলে আছে ফাতরার বনের চারপাশে। ছোট
ছোট খাল বনের বুকটাকে চিড়ে দিয়ে গেছে। মাছ
ধরার নৌকা থেকে জেলেরাও জাল ছড়িয়ে রেখেছেন সেখানে। নানা
প্রজাতির চিংড়ি, পোয়া, তপসে, কোরাল, পারশে, রূপচাঁদা ও ইলিশ মাছের
স্বাদ এখান থেকেই মেলে। আর
সুস্বাদু কাঁকড়া তো আছেই। বনের
ভেতরে যেতে হলে সুন্দরবনের মতো শ্বাসমূলের (হুল) ফাঁকে ফাঁকে পা দিয়ে চলতে হয়। খানিকটা
দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে আমরা সবাই গেলাম ফাতরার বনে পশ্চিম-দক্ষিণ প্রান্তে; যেখানে সাগরের সঙ্গে মিশে একাকার হয়ে গেছে আন্ধারমানিক নদ আর খাপড়াভাঙা নদী। মোহনার
পাড়ে দাঁড়াতে না দাঁড়াতেই শুদ্ধ বাতাস, আছড়ে পড়া ঢেউ পা দুটি ভিজিয়ে দিতে লাগল বিরামহীনভাবে। সূর্য
যতই সন্ধ্যাবেলাকে কাছে টানছে, জোয়ারের পানি ততটাই বাড়ছিল। এই
মোহনায় বিট কর্মকর্তা জাফর উল্লাহ আর শংকর দা বললেন, ফাতরার বন আসলে সুন্দরবনের একটি অংশ ছিল। মানুষের
চাপ-প্রতাপে বন থেকে বেঙ্গল টাইগার-হরিণ হারিয়ে গেছে। তবে
বানর, শূকর, শজারু, মেছো বাঘ, শিয়াল, অজগরসহ সব ধরনের সাপ, বনমোরগের বসতি আছে এখানে।
কুয়াকাটা
ভ্রমণে গেলে পর্যটকেরা সহজেই ঘুরে আসতে পারেন ফাতরার বন। ট্রলার
ভাড়া করে যেতে ঘণ্টা দুয়েক সময় লাগে। বন
বিভাগের কাছ থেকে অনুমোদন নিয়ে বনভোজনের ব্যবস্থা আছে। বনের
ভেতরে ‘মায়ের দোয়া’ নামে একটি ছোট খাবারের হোটেল রয়েছে, যেখানে পাওয়া যায় কাঁকড়া ভাজা, মাছ-চিংড়ি ভাজা। বনের
ভেতরে মজাদার খাবার খেতে ভয় নেই। কারণ
বাঘ তো হারিয়ে গেছে ফাতরার বনে। তবে
বাঘ ফিরে আসুক এখানে, সেটা সবারই প্রত্যাশা। তাহলে
বাঘের ভয়ে রক্ষা পাবে ফাতরার বন।
যেভাবে
যাবেন
ফাতরার
চরে যেতে হলে প্রথমে আসতে হবে কুয়াকাটায়। সেখান
থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় এক ঘণ্টায় যাওয়া যায় ফাতরার চরে। ঢাকা
থেকে কুয়াকাটায় সড়ক ও নৌ—দুই
পথেই যেতে পারবেন। তবে
লঞ্চ আসে পটুয়াখালী পর্যন্ত। লঞ্চে
সিঙ্গেল কেবিনের ভাড়া ১ হাজার টাকা,
ডবল কেবিনের ভাড়া ১ হাজার ৮০০
টাকা ও ভিআইপি কেবিন
ভাড়া ৫ হাজার টাকা। পটুয়াখালী
থেকে বাস অথবা মাইক্রোবাসে যাওয়া যাবে কুয়াকাটায়। বাসভাড়া
জনপ্রতি ১০০ টাকা। মাইক্রোবাসের
ভাড়া দরদাম করে নিতে হবে।
ঢাকা
থেকে কুয়াকাটায় বাসে যাওয়া যায়। চেয়ারকোচে
জনপ্রতি ভাড়া ৬৫০ টাকা। শীতাতপ
নিয়ন্ত্রিত কনক পরিবহনের ভাড়া ১ হাজার ৩০০
টাকা। কুয়াকাটা
থেকে ফাতরার চরে যাওয়ার জন্য ইঞ্জিনচালিত বোট ২ হাজার থেকে
২ হাজার ৫০০ টাকায় পাওয়া যায়। ফাতরার
চরে যাওয়ার আগে বন বিভাগ থেকে অনুমতি নিতে হবে।
No comments:
Post a Comment